ঘুষের টাকা না দেওয়াই অফিস সহায়ককে বিদ্যালয় প্রবেশ করতে দিল না প্রধান শিক্ষক
আমঝুপি অফিস
ঘুষের ৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় মেহেরপুরের গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক হাসানুজ্জামানকে বিদ্যালয়ে থেকে বের করে দিল প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সরকারি বিধি মোতাবেক হাসানুজ্জামান ২০১৫ সালের ১২ জুলাই বিদ্যালয়ে এমএলএসএস (পিয়ন) পদে নিয়োগ পান। নিয়োগের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর হাসানুজ্জামানের চাকরি জাতীয়করণ হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৭,০০,০০০০,০৭১,১৮,০০২.১৭ (অংশ-২)-৬০৪ তারিখ ২১ মে ২০১৮ এবং স্মারক নং-৫৭.০০.০০০০.০১.১৫.৬২৮.১৮-২১৩৮ তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২৩ অনুযায়ী এ জাতীয়করণ কার্যকর হয়।
জাতীয়করণের আদেশ অনুযায়ী এ যোগদান কার্যকর ধরা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর অফিস সহায়ক হিসেবে হাসানুজ্জামান জাতীয়কৃত পদে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
অফিস সহায়ক হাসানুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদানের সময় প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান আমার কাছে থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেন। চাকরি জাতীয়করণের পর তিনি প্রায়ই আমার ওপর ক্ষিপ্ত থাকেন। নানা সময় অপমান, অপদস্ত করেন। বৃহস্পতিবার(১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাকে স্বাক্ষর করতে দেননি। পরে তিনি একটি চুক্তিনামা লিখে আনেন। সেই চুক্তিতে বলা হয়, এই বিদ্যালয়ে চাকরি করতে হলে জাতীয়করণের জন্য ব্যয় বাবদ আমাকে আরও ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। তিনি আরও জানান, বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেনকে মৌখিকভাবে অবগত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। তার ভাই গাংনীর সাবেক মেয়র আহমেদ আলীর রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। বিদ্যালয় জাতীয়করণের সময় প্রত্যেক শিক্ষক ও কর্মচারীর কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে আগের টাকা দিয়েছি। এখন আবার পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। আমি চাকরি করতে চাই, তবে ঘুষ দিয়ে নয়।”
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন দেখিয়ে সরকারি ফান্ড থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি বিদ্যালয়ের একাধিক মূল্যবান গাছ কোনো রেজুলেশন ছাড়াই বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। বিদ্যালয়ে অবস্থানরত অনেক শিক্ষক এসব দুর্নীতির কথা জানেন, তবে তার ক্ষমতার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চান না।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয় জাতীয়করণের সময় আসলেই কিছু খরচ হয়েছে। এ কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। তবে এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ তিনি এড়িয়ে যান এবং অফিস সহায়ককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাও অস্বীকার করেন ও সাংবাদিকের কাছে সুকৌশলী বিষয়টি এড়িয়ে যান।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘুষ না দেওয়ায় অফিস সহায়ককে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। হাসানুজ্জামানকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।