গাংনী প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভিডিও কলে অশ্লীল কথোপকথন ও অঙ্গভঙ্গির দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জেরে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার(১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোখলেসুর রহমান।
তবে স্থায়ী বহিষ্কার ঠেকাতে বিভিন্ন দপ্তরে টাকা দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা চলছে—এমন অভিযোগও উঠেছে রাজুর ঘনিষ্ঠ মহলের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ফেসবুকে প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ ও দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মধ্যে ভিডিও কলে অশ্লীল কথোপকথন এবং অনৈতিক অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই তা জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় তোল।শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের মাঝে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ ও আতঙ্ক।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের অভিভাবক মনিরুল ইসলাম সেন্টু বলেন, একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় শিক্ষক। কিন্তু সেই শিক্ষকই যদি সরলতার সুযোগ নিয়ে অশ্লীল আচরণ করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা পাবে কোথায়? রাজু আহমেদকে যদি আবার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়বে। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই।
সাবেক শিক্ষার্থী মাসুম পারভেজ বলেন, আমার বোন এখন এই বিদ্যালয়ে পড়ে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর পরিবারসহ আমি আতঙ্কে আছি। এটি প্রথম ঘটনা নয়—তার বিরুদ্ধে আগে থেকেও অনৈতিক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করে অভিযোগ ধামাচাপার নজির রয়েছে।”
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়াসমিনা খাতুন বলেন,
শিক্ষক আমাদের বাবার মতো। কিন্তু সেই শিক্ষকই যদি অশ্লীল লালসার শিকার বানানোর চেষ্টা করেন—তাহলে আমরা কোথায় যাব? এমন জঘন্য শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে।
সহকারী শিক্ষক জামশেদ আলী জানান,
আমরা বহু বছর ধরে সুনামের সঙ্গে চাকরি করছি। কিন্তু একজন প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডে শিক্ষক সমাজ অপমানিত। প্রায় এক বছর ধরে রাজু আহমেদ ও ওই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আমরা সতর্ক করেছিলাম। শিক্ষার্থীরা ভুল করতেই পারে, কিন্তু গুরুজন হয়ে তিনি কিভাবে এমন অপরাধ করলেন? তিনি থাকলে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বাড়বে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, স্থায়ী বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থা এড়াতে রাজুর পরিবারের সদস্যরা টাকা–পয়সা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এসব কথোপকথনের অডিও–রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন,
বিষয়টি জানার পর তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থায়ী বহিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। তবে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি আমাদের জানা আছে। তবে লিখিত অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

