আজকের মেহেরপুর ডেস্ক:
চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরে শামসুল শেখ (৬০) নামের এক বৃদ্ধর ঘাড়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে পৌর শহরের বেলগাছি ঈদগাহপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় শামসুল শেখ চিৎকার করলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে সদর হাপসাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার সকাল আটটার দিকে বৃদ্ধ শামসুল শেখের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গতকালই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত নাতজামায় জাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত জাহিদ হাসান চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দলিয়ারপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।
নিহত শামসুল শেখের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে আমার নাতনী কামনা খাতুনে সঙ্গে তার স্বামী জাহিদ হাসানের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। জাহিদ বিভিন্ন সময় কামনাকে যৌতুকের জন্য মারধর করতো। যে কারণে জাহিদকে আমার স্বামী তেমন পছন্দ করতেন না। ছোটবেলা থেকে কামনা আমাদের এখানে থেকে বড় হয়েছে। দেড় বছর পূর্বে আগে জাহিদ হাসানের সঙ্গে কামনার পারিবারিকভাবে বিয়ে দিই। এরপর থেকেই জাহিদ বিভিন্ন সময় কামনার সঙ্গে খারাপ আচরণ ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল।
যে কারণে কমলা তাকে ডিভোর্স দিয়ে আবার আমাদের এখানে চলে আসে। গত ৩ মাস পূর্বে জাহিদ কমলাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে পুনরায় বিয়ে করে। কিন্তু সে আবার কামনাকে নির্যাতন করতে শুরু করলে কামনা আবার তাকে তালাক দিয়ে চলে আসে। কামনা আমাদের এখানে চলে আসার পর থেকে জাহিদ তাকে ফিরিয়ে নিতে মোবাইলে জানায়। কিন্তু এতে সম্পূর্ণ অমত জানায় আমার স্বামী।
তিনি আরও জানান, ‘গত সোমবার জাহিদ কামনাকে আবার ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসে। এসময় কামনার নানা কামনাকে আর তার সংসারে ফেরত পাঠাবে না বলে জানিয়ে দেয়। তখন হাসান আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। ওইদিন রাতে আমার স্বামী খাবার খেয়ে বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়েন। আমি ও নাতনী কামনা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ আমার স্বামীর চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দৌঁড়ে বারান্দায় গেলে কামনার নানা বলে হাসান তাঁর গলায় ইনজেকশন ফুটিয়ে পালিয়ে দিয়েছে। গলার ব্যাথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। জীবিত অবস্থায় তিনি বলে গেছেন তাঁর ঘাড়ে তাঁরই নাতজামায় জাহিদ ইনজেকশনে বিষ ফুটিয়ে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘ইনজেকশনের মাধ্যমে ঘাড়ে বিষ প্রয়োগ করে এক বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে বলে সদর থানায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। নিহত শামসুল শেখের ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে অভিযুক্ত হাসান আলীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তাঁকে ঘটনাসম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সুরতহাল প্রতিবেদশ শেষে বিকেলেই লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, গতকাল বুধবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত শামসুল শেখের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুই সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে শামসুল শেখের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময়কে সভাপতি করে মেডিকেল বোর্ডে সদস্য ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. সাইদুজ্জামান। বিকেলেই ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ।
নিতহ শামসুল শেখের ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সাইদুজ্জামান বলেন, ‘দুই সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্তটি সম্পন্ন করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানানো হবে।’