Home » মহেশপুরে আগমনী শীতে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

মহেশপুরে আগমনী শীতে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

কর্তৃক xVS2UqarHx07
211 ভিউজ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি মোঃ রমজান আলী:

শীতকাল এসে দোরজায় কড়া নাড়ছে। আর শীত কালের ঐতিহ্যবাহী একটি সুমিষ্ট পানিয় হচ্ছে খেজুর রস। বর্তমান এই মৌসুম ভিত্তিক খেজুর রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গাছিরা।

তবে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় রসের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই খেজুরের রসকে আগামি প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি বেশি বেশি করে খেজুর গাছ রোপণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

মহেশপুর উপজেলার হুদোর মোড় শ্রীরামপুরে রাস্তার দুপাশে তাকালেই চোখে পড়ে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ। শুধু নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন রাস্তার এই সব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গাছিড়া। আর শীতের সকালে মুড়ি দিয়ে এই রসগুলো খাওয়ার জন্য অনেক মানুষই গাছিদের কাছ থেকে কিনে নেয়। আর অবশিষ্ট রস দিয়ে গাছিড়া রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা ও পাটালী গুড় তৈরি করেন। তবে বর্তমান সময়ে খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে ভেজাল মিশ্রিত গুড় তৈরি করার কারণে দিন দিন খেজুরের গুড় ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে।

যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। একটি গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এ ছাড়া খেজুরর পাতা দিয়ে আকর্ষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারি না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন উপজেলা জুড়ে বিলুপ্তির পথে।

গাছিরা জানান, পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে ৪মাসের জন্য গাছ ভেদে ৫থেকে ৭কেজি করে খেজুরের গুড় দিয়ে গাছগুলো আমরা লিজ নিয়ে থাকি।

তারা আরও বলেন, চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় চাহিদা মতো গুড় তৈরি করতে পারি না। তারপরও এবছর প্রায় ২ শতাধিক বেশি খেজুর গাছের মালিকদের সাথে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশা ধরে রেখেছি।

মহেশপুর পৌরসভার এলকার মোঃ আমিদুল খান বলেন, যে ভাবে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় আর আমাদের ব্যবসা হবে না। বর্তমান বাজারে আখের গুড়, চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মান সম্পন্ন খেজুরের গুড়ের দাম এ বছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছি। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা নেওয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ একটু বেশি হয়। যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছি এই ব্যবসা।

মহেশপুর উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ হাসান আলী বলেন, আজ বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুমে আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে। তবে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

০ মন্তব্য

You may also like

মতামত দিন