Home » জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরে রাজনৈতিক নেতাদের যুক্ত করা নিয়ে জল্পনা।

জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরে রাজনৈতিক নেতাদের যুক্ত করা নিয়ে জল্পনা।

কর্তৃক ajkermeherpur
15 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সফরসঙ্গী এবার রাজনৈতিক দলের চার নেতা। সরকার প্রধানের এই সফরে রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের যুক্ত করা নিয়ে চলছে নানান আলোচনা। কেউ বলছেন দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে আবার কেউ বলছেন রাজনৈতিক ঐক্যের জায়গা স্পষ্ট করতেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, দোসরা অক্টোবর দেশে ফেরার আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া সাক্ষাৎকার দিতে পারেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া এবং সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। এবারের অধিবেশন বিশ্বমঞ্চে সেই অগ্রযাত্রা তুলে ধরার সুযোগ দেবে।

তবে এই সফরে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য কী, সেখানে কী ভূমিকা রাখবেন তারা, আর কেনই বা নির্দিষ্ট তিনটি দলের প্রতিনিধিকেই বা কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্ন রয়েছে জনমনে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনে রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে এমন বার্তা দিতে চায় সরকার। আর এ কারণেই এই সফরে যুক্ত হচ্ছেন তারা।

নির্দিষ্ট তিনটি দল থেকে প্রতিনিধি নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত, নির্বাচনের আগে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নও রয়েছে অনেকের।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দলীয় প্রভাব এবং দলীয় সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রতিনিধি ঠিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি ঐক্য তৈরি হয়েছে।

তবে, এমন সব আলোচনার বাইরে সরকারের দিক থেকে রাজনৈতিক দায় বণ্টনের একটি চেষ্টাও দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে।

রাজনৈতিক নেতারা আসলে কেন সফরসঙ্গী
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, প্রতিনিধি দলে অংশ নেবেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

জানা গেছে, এই সফরের বেশ কিছু সাইডলাইন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি অংশ নেবেন এই রাজনৈতিক নেতারাও। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঙ্গেও একটি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তাদের।

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের সঙ্গে আছে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে দেশকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে এমন বার্তা দিতেই প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে তাদেরকে যুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিবিসি বাংলাকে বলেন, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি কিছু সেশন আছে যেখানে আমাদের পার্টিসিপেশন আছে। এছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গেও একটা মিটিং আছে।

রাজনৈতিক নেতাদের এই সফরে যুক্ত করার কারণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কিছু ধারণাও দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেছিলেন, যেহেতু আমরা একটি রূপান্তর পর্যায়ের দিকে এগোচ্ছি এবং দেশ পরিচালনার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের হাতে হস্তান্তর করা হবে, তাই তাদের প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা হওয়ায়, শেষ কয়েক মাসের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব কাজের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত রাখতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার, যাতে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা এসব কাজের ধারাবাহিকতার বিষয়ে অবগত থাকে।

প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাতিসংঘের এই অধিবেশনে এমন অনেক কিছুই আলোচনা হবে যার একটা কন্টিনিউয়েশনের দরকার আছে। সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেমিনার হয়েছিল সেখানেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছিল।

আহম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু রাজনৈতিক দলের কাছেই ভবিষ্যতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে যুক্ত রাখতে চায় সরকার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ মনে করেন, রাজনৈতিক ঐক্য সবার সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মার্কিন প্রভাবের যে বিষয়টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেখানেও রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে রাখতে চাইছেন প্রধান উপদেষ্টা। সম্ভবত তিনি একাই এই ঝুঁকিটা নিতে চাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দলকেও তিনি এই ঝুঁকির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চান, যাতে রাজনৈতিক দলের দিক থেকে এ বিষয়ে কোনো বিরোধিতা না আসে। সেটাও একটা লক্ষ্য থাকতে পারে।

এই তিন দলের প্রতিনিধিই বা কেন সফরসঙ্গী
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় গত ছয় মাসে দফায় দফায় বৈঠক করেছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যেখানে অন্তত ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সংস্কার কমিশনগুলোর দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংস্কার প্রশ্নে অনেক বিষয়ে একমত হলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো একমত হতে পারেনি দলগুলো। এমনকি, এসব আলোচনার মধ্যেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বা পিআর এর দাবিতে মাঠের কর্মসূচিও শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল, যার বিপরীত অবস্থান নিয়ে নানা মন্তব্য করে বিএনপি।

এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কেন কেবল এই তিনটি দলকেই বেছে নিলো সরকার

০ মন্তব্য

You may also like

মতামত দিন