নিজস্ব প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার নামে বিক্রিত বিষাক্ত অ্যালকোহল (স্পিরিট) পানে এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১১৭ বোতল অ্যালকোহল বা স্পিরিট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় জেলা পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খেজুরা গ্রামের মৃত বাকি শেখের ছেলে জুমাত আলী (৪৬) ও ঝিনাইদহের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত পুটি মণ্ডলের ছেলে ফারুক আহমেদ ওরফে ‘অ্যালকো ফারুক’ (৪০)।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ বাজার সংলগ্ন জমির হোসেনের আড়তের পিছনে স্পিরিট পানে অসুস্থ হয়ে পড়েন পদ্মবিলা ইউনিয়নের নফরকান্দি গ্রামের খেদের আলী (৪০), খেজুরা গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম (৪০), পিরোজখালী গ্রামের লাল্টু ওরফে রিপু (৩০), শংকরচন্দ্র মাঝেরপাড়ার শহীদ (৪৫), ডিঙ্গেদহ টাওয়ারপাড়ার সমীর (৫৫) ও এশিয়া বিস্কুটপাড়ার লাল্টুসহ (৫২) আরও অনেকে। এর মধ্যে খেদের আলী ও মোহাম্মদ সেলিম মারা যান শনিবার (১১ অক্টোবর) আর বাকি চারজন মারা যান পরদিন রোববার।
এদিকে, ঘটনার পর নিহত লাল্টুর ভাই রাকিবুল মিয়া বাদী হয়ে গত সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৪, তারিখ-১৩/১০/২০২৫, ধারা-৩০৪ (ক) দণ্ডবিধি)। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর সদর থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেল (সিসিআইসি)-এর একাধিক দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় জুমাত আলীকে ও গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ জেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামলার অন্যতম আসামি ও মূল হোতা ফারুক আহমেদ ওরফে ‘অ্যালকো ফারুককে। গ্রেপ্তারের সময় তার হেফাজত থেকে উদ্ধার হয় ১১৭ বোতল মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহল বা স্পিরিট। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক আহমেদ ওরফে অ্যালকো ফারুক স্বীকার করেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে (লাইসেন্সবিহীন) হোমিও চিকিৎসার নামে স্পিরিট বিক্রি করতেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন হোমিও দোকান ও মাদকসেবীদের কাছে এসব বিষাক্ত পদার্থ সরবরাহ করতেন। পুলিশের ধারণা, তার সরবরাহকৃত মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহলই ভুক্তভোগীদের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) জামাল আল নাসের বলেন, ‘গত রোববার সন্ধ্যায় সদর থানায় এসে দুজন তথ্য দেন ডিঙ্গেদহ বাজারে কয়েকজন লোক অ্যালকোহল পান করেছে, এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। পরবর্তীতে আমরা সদর হাসপাতালে একজনের মৃত্যুর তথ্য পায়। সেখানে চিকিৎসকের সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ অ্যালকোহল পয়জেনিং লেখা ছিল। এর পরপরই আমরা ডিঙ্গেদহে অনুসন্ধানে এসে অ্যালকোহল পানে ছয়জনের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে জানতে পারি। যার মধ্যে আগেই চারজনের দাফন সম্পন্ন হয়। হাসপাতালে মারা যাওয়া একজন এবং রোববার রাত সাড়ে আটটায় মৃত্যু হওয়া আরেকজনের মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বিষাক্ত অ্যালকোহল পানের কারণে দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছি। অন্যদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত বা ফরেনসিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা সম্পর্কে আদালতকে অবগত করা হয়েছে। আদালত যদি পরবর্তীতে সকল মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

